পৃথিবীসেরা কিছু মসজিদ এবং তাদের ইতিহাস

মসজিদ মুসলমানদের একটি প্রার্থনার স্থান। রাসুল স: মসজিদ নির্মান করেছিলেন নামাজ এবং তার নবগঠিত রাস্ট্রের সকল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তিনি সেখানে সাহাবিদের সাথে মোলাকাত করতেন এবং সকল সাহাবিদের সাথে সেখানে সালাত আদায় করতেন। রাসুল স: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর প্রথম মসজিদের স্থাপন করেন। এবং তখন থেকে আজও অবধি পৃথীবির যেখানে মুসলিম বসতি রয়েছে সেখানেই মসজিদ স্থাপন করা হয়েছে। মসজিদকে বলা হয়ে থাকে আল্লাহর ঘর।

মসজিদ সম্পর্কে আল্লাহ পবিত্র কুরানে বলেন
''নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে'' সুরা আত তাওবা, আয়াত ১৮।

চলুন দুনিয়ার প্রথম মসজিদটি দিয়েই শুরু করা যাক।

০১) Quba Mosque

এটি মসজিদের ইতিহাসে সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ। রাসুল স: মক্কাথেকে মদিনায় হিজরতের পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় এই মসজিদটি স্থাপন করেন। এর প্রথম ইটটি রাসুল স: নিজের হাতে স্থাপন করেছিলেন। এবং নির্মান কাজ সম্পন্ন করেন সম্মানিত সাহাবিগন। তাই এই মসজিদটি অত্যান্ত পবিত্র একটি মসজিদ হিসাবে গন্য করা হয়। এই মসজিদটির সাথে জরিয়ে রয়েছে ইসলামের ইতিহাস। এখানে জিরাইল আ: নিয়মিত আসতে রাসুল স: এর কাছে কুরান নিয়ে। হাদিসে বলা আছে রাসুল স: বলেছেন কুবা মসজিদে দুই রাকাত নফল নামাজ একটি উমরা হজের সওয়াবের সমান হবে।

আল সৌদ রাজবংশ ক্ষমতায় এসে আব্দেল ওয়াহেদ আল ওয়াকিল কে মসজিদটি পুননির্মান এর দায়িত্ব দেয়। তিনি পুরাতন মসজিদটি অক্ষত রেখেই নতুনটি তার উপর নির্মান করতে চেয়েছিলেন কিন্ত দুর্ঘটনা বশত সেটি ভেঙে পরে। ফলে তার উপর নতুন মসজিদটি নির্মন করা হয়। তবে পুরাতন মসজিদটির সকল ইট এবং অন্যান্য জিনিষপত্র সংরক্ষিত আছে। ধারনা করা হচ্ছে নিচের ছবিটি আসল কুবা মসজিদ যেটি ভেঙে পরেছিল। তবে ছবিটি খুব অস্পস্ট এবং অনেক দুর থেকে তুলা হয়েছে।

বর্তমান মসজিদটি একটি দ্বিতল বিশিষ্ট ভবন। এর মধ্যে নামাজের জায়গা ছারাও রয়েছে আবাসিক স্থান, বিশাল অজুর স্থান, অফিস, দোকান এবং বিশাল একটি লাইব্রেরি। যেখানে অনেক পুরানো এবং প্রথম দিককার ইসলামি সাহিত্য রয়েছে।

০২) Qolşärif Mosque

আমার দেখা অন্যতম সুন্দর মসজিদগুলো মধ্যে একটি। এটি রাশিয়ার তাতারস্থান এলাকায় কাজান ক্রেমলিনে অবস্থিত। ১৬ শতকে এটি নির্মিত হয়। যখন এটি নির্মিত হয় তখন এটি ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ এমনকি গোটা ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ ছিল এটি। এর নামকরন করাহয় এর প্রথম ইমাম কুলশরিফ এর নামে। যিনি ১৫৫২ সালে রাশিয়ান বাহিনির হাত থেকে কাজান রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন। ধারনা করা হয় প্রথম মসজিদটির প্রচুর গম্বুজ, মিনার এবং তাবু ছিল। এর ডিজাইন করাহয়েছিল। এর ডিজাইন ছিল ভলগা বুলগেরিয়ানদের ধাচে। যদিও এতে রেনেসা এবং অটোমান আর্কিটেকচারের ছোয়া ছিল। মসজিদটি Ivan The Terrible কাজান আক্রমনের সময় পুরোপুরি ধংস করেদেন ১৫৫২ সালে এবং সাথে এর ইমাম কুলশরিফকেও হত্যা করেন। তিনি এর মুল্যবান নির্মান সামগ্রি রাশিয়াতে নিয়ে যান এবং মস্কোর চার্চ Saint Basil's Cathedral এ সেগুলো প্রতিস্থাপন করেন।

বর্তমান মসজিদটি ১৯৯৬ সালে পনুনির্মান করা উদ্যেগ নেয় রাশিয়া সরকার। ২০০৫ সালে এর কাজ শেষ হয়। বর্তমানটিতে আধুনিক কাজ করা হয়েছে খুব বেশি। তবে তা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

মসজিদটিতে এখন একসাথে ৬০০০ মুসুল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারে। পুননির্মন এর জন্য সৌদিআরব, দুবাই সহ বেশ কিছু দেশ আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছিল।

এই মসজিদটির সাথে জরিয়ে আছে তাতার মুসলিমদের এক নির্মম ইতিহাস। আছে কুলশরিফ এবং তার ছাত্রদের ইসলামের জন্য মহান আত্মত্যাগ এর ইতিহাস। মারা যাবে জেনেও শুধু মাত্র ইসলামকে ভালবেসে এই মসজিদটিকে ভালবেসে একে রক্ষার জন্য কুলশরিফ এবং তার ছাত্ররা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই বলা যায় কুল শরিফ শুধু একটি মসজিদ না এটি রাশিয়াতে ইসলামের এক বিশাল ইতিহাস।

০৩) Al-Masjid an-Nabawi

এই মসজিদটি দেখেননি এমন মুসলমান পাওয়া যাবে না। এটি (ইসলামের ইতিহাসে) রাসুল স: এর তৈরি দ্বিতিয় মসজিদ। এই মসজিদ টির নির্মান কাজে সয়ং নবীজি নিজে অংশগ্রহন করেছেন। মনে করা হয় এর কোন না কোন অংশে ওনার হাতের ছোয় লেগে আছে। এটি একসাথে কমিউনিটি সেন্টার, আদালত এবং ইসলামি শিক্ষালয় হিসাবে ব্যবহৃত হত।

এই মসজিদটির মুল আকর্ষন হল এখানে রাসুল স: এর রওজা মুবারক অবস্থিত। মসজিদটির কেন্দ্রে রিয়াজ উল জান্নাহ বলে একটি ছোট স্থান আছে। এটি রাসুল স: এর রওজা মুবারক থেকে মিম্বার (আমি এই শব্দটার মানে বুঝিনি। যদি কেও জানেন বইলেন প্লিজ) পর্যন্ত। এসম্পর্কিত হাদিসটি হচ্ছে "" হজরত আবুহুরাইরা রা: হতে বর্নিত রাসুল স: বলেছেন আমার ঘরথেকে আমার মিম্বর পর্যন্ত জায়গাটুকু জান্নাতের একটি অংশ এবং আামর মিম্বরটি জান্নাতের একটি হাওজ(জলাধার)।

রাসুল স: এর রওজা

খলিফাদের রওজা।
এখানে রাসুল স: এর রওজার পাশেই ইসলামে দুই মহান খলিফা হযরত আবু বকর রা: এবং হযরত ওমর রা: এর রওজা মুবারক অবস্থিত। মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে আর একটি কবরের জন্য স্থান রয়েছে যেটি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে হযরত ইসা আ: এর জন্য। তিনি পুনরায় পৃথিবিতে আগমন করার পর উনার ওফাতের পরে এখানেই ওনাকে সমাহিত করা হবে।

প্রথম মসজিদটি নির্মিত হয় ঠিক এখানেই। সেটির আকার ছিল ৯৮ ফিট বাই ১১৫ ফিট। ৭ ফিট উচু এবং ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি পুরু ওয়াল ছিল। কোন ছাদ ছিলনা। ছাদ এর বদলে খেজুর গাছের পাতাদিয়ে ছাওয়া হয়েছিল। ওয়াল গুলো খেজুর গাছের কান্ড এবং মাটি দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। তিনটি দরজাছিল বাবে রহমান( রহমাতের দরজা) দক্ষিন দিকে, বাবে জিবরাঈল( জিবরাঈল আ: এর দরজা) পশ্চিম দেকে এবং বাবে আল নিসা( মহিলাদের দরজা) পুর্ব দিকে। এক কোনায় রাসুল স: একটি ছাওনি যুক্ত স্থান তৈরি করেছিলেন যেটিকে বলা হয় আসহাবে সুফফা। প্রথমে এর কিবলা ছিল উত্তরে জেরুজালেম এর দিকে পরে আল্লাহর নির্দেশে কিবলা পরিবর্তন হয় তখন এর কিবলা পশ্চিম দিকে করা হয়। ৭ বছর পরে এর আকার দ্বিগুন করা হয় এবং ওয়ালে উচ্চতা করা হয় ১১ ফিট।

বর্তমান মসজিদ টি প্রথমটির থেকে ১০০ গুন বড়। এখানে এখন একসাথে ১০ লক্ষ মানুষ সালাত আদায় করতে পারে। মসজিদটি প্রত্যেক রাজবংশ একবার করে মডিফিকেশন করেছে বিভিন্ন ভাবে। সেগুলো আরেক ইতিহাস। বর্তমানে অটমান সম্রাজ্যের এবং আলসৌদের তৈরি দুটি অংশ রয়েছে। ছাদটি সমতল এবং ২৭ টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের আসেপাসের এলাকা গুলো কিছু স্বয়ংক্রিয় ( ছবিতে উল্লেখ্য) ছাতার মত ছাওনি দ্বারা ঢেকে দেয়া হয়। এগুলো ডিজাইন করেছেন জার্মান আর্কিটেক্ট Mahmoud Bodo Rasch এবং তার ফার্ম SL Rasch GmbH

সবুজ গম্বুজটি রাসুল স: এর রওজা মোবারকের ঠিক উপরে অবস্থিত। এটি কাঠের তৈরি। আপনারা হয়ত জেনে থাকবে রাসুল সা: এর রওজা মোবারক হযরত আয়সা রা: এর ঘরে অবস্থিত। তো এই গম্বুজটি সেই বিশেষ স্থানটিকেই নির্দেশ করে। অটোমান শাষনামলে এই গম্বুজটি নির্মিত হয় এবং এটিকে আলাদ করতে সবুজ রঙ করা হয়।

০৪) Masjid Istiqlal

ইসতিকালাল একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে স্বাধিনতা। ইন্দোনেশিয়া নেদাল্যন্ডেস এর হাত স্বাধিনতা লাভকরে ১৯৪৫ সালে। ১৯৮৯ সাল থেকেই একটি জাতীয় মসজিদ নির্মানের পরিকল্পনা করে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। ১৯৫৩ সালে এর কন্সট্রাকশন কমিটি তৈরি করা হয়। এই কমিটির প্রধান ছিলেন চক্রমিনোটো। প্রথমে আসে এর অবস্থান নিয়ে। সবার প্রস্তাবনার উপরে তৎকালিন প্রেসিডেন্ট সুকর্ন প্রস্তাব করেন ইন্দোনেশিয়ার স্বধিনতার স্কয়ার মার্দেকা প্যালেস এর পাশে এটি নির্মান করার জন্য। সেটিই সাদরে গৃহিত হয়। তার যুক্তি ছিল এর পাশেই দুইটি প্রচিন চার্চ রয়েছে ফলে ইন্দোনেশিয়ায় এই মসজিদটির মাধ্যমে একটি ধর্মিয় সৌহার্দ স্থাপিত হবে। এটি ডিজাইন এরজন্য একটি প্রতোজোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে উত্তর সুমাত্রা থেকে আগত Frederich Silaban নামক একজন খ্রিস্টান আর্কিটেক্ট এর ডিজাইন এর দায়িত্ব পান। ১৯৬১ সালে সুকর্ন এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এবং ১৯৭৮ সালে এটি সাধারন মুসুল্লিদের জন্য খলে দেয়া হয়। এখানে একসাথে এক লক্ষ বিশ হাজার মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। যা এটিকে সমগ্র দক্ষিন এশিয়াতে সবেচেয়ে বড় মসজিদের সুখ্যাতি দিয়েছে।

মসজিদটিতে সাতটি দরজা আছে যাদের নামগুলো রাখা হয়েছে আল্লাহর সুন্দরতম নাম গুলো থেকে সাতটি নাম নিয়ে। সাতটি দরজা দেয়ার কারন হল সাতটি জান্নাত কে বোঝানো হয়েছে।

ওযুর স্থান নিচে। মসজিদটি মুলত দুইটি বিশাল হলরুমের মত আয়াতকার শেইপের ভবনের সমস্টি। ছোটটি একই সাথে প্রবেশ পথ, সিড়ি এবং নামাজের স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মুল আয়াতাকার ভবনটিতে একটি বিশাল গম্বুজ রয়েছে। এর ব্যাসার্ধ ৪৫ মিটার। ৪৫ নাম্বারটা তাদের স্বাধিনতা ঘোষনা করার দিন ১৯৪৫ সালকে বুঝানো হয়েছে। গম্বুজটি সাপোর্ট দিচ্ছে ১২টি গোলাকার কলাম যা দেখে আমি প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ১২ টির কারন হচ্ছে এগুলো রাসুল স: এর জন্ম তারিখ ১২ই রবিউল আউয়াল নির্দেশ করে।

মসজিদটিতে চার তলা বিশিষ্ট ব্যালকনি রয়েছে। মুল নামেজের তলা এবং চারটি ব্যালকনি মিলিয়ে এটিকে পাচ তলা করেছে যা ইসলামের মুল ৫ টি ভিত্তি( কালিমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব এবং যাকাত) কে নির্দেশ করে। ছোট গম্বুজটির ব্যসার্ধ ৮ মিটার। এটি ইন্দোনেশিয়ার স্বাধিনতার মাস আগস্ট কে নির্দেশ করে। পুরো মসজিদের ইন্টেরিয়র ডিজাইন একবারে ক্লিন এবং ছিমছাম।

পশ্চিম দিকে মিহরাবে দুই পাশে বিশাল দুইটি স্টিল সেকশন দিয়ে আল্লাহ এবং মুহাম্মদ স: লেখা আছে। আমার মনে হয় সমগ্র দক্ষিন এশিয়ায় এতবড় নামের ফলক আর নাই। এই দুই নামের মাঝখানে সুরা ত্বহা এর ১৪ নাম্বার আয়াত সুন্দর করে খোদাই করা হয়েছে। যেখানে স্পস্ট বলা হয়েছে
""আমিই আল্লাহ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। অতএব আমার এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।""

এই মসজিদের একটাই মিনার যা এর উঠানে অবস্থিত। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে আল্লাহ এক এবং অদ্বিতিয়। মিনারের মুল স্ট্রাকচারটি ৬৬.৬৬ মিটার উচু। যা আল কুরানের ৬৬৬৬ টি আয়াত নির্দেশ করে। এর উপরের স্টিলের চুরাটি ৩০ মিটার উচু। যা আল কুরানের ৩০ পারা নির্দেশ করে।

এইবার শুনেন এই মসজিদটির ভিজিটরদের লিস্ট। এই মসজিদটি ভিজিট করেছেন বারাক ওবামা, বিল ক্লিনটন, মাহমুদ আহমেদিনেজাদ, মুয়াম্মার গাদ্দাফি, প্রিন্স চার্লস, লি ইউয়ান চাও, এন্জেলা মার্কেল সহ আরো প্রায় বহু বিশ্ব নেতা। আহমেদিনেজাদ এখানে সাধারন মানুষের সাথে এক কাতারে দারিয়ে নামাজ আদায় করেছেন। যদিও তাদের অনেকেও অমুসলিম তারপরও কে না এত সুন্দর একটা স্থাপনা দেখার চান্স মিস করতে চায়??

০৫) Sultan Ahmed Mosque

তুরস্কের রাজধানি ইস্তাম্বুলে অবস্থিত। মসজিদটি তুরস্কের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। মসজিদটিকে নিল মসজিদও বলা হয় কারন এর অভ্যন্তরে দেয়ালে নিল রঙের দামি টাইলস এর কাজ করা হয়েছে। মসজিদটি অটোমান সম্রাট প্রথম আহমদ এর সময় অর্থাৎ ১৬০৯ থেকে ১৬১৯ সালের মধ্যে নির্মান করা হয়। পুরো কমপ্লেক্সটিতে প্রথম আহমেদ এর মাজার, একটি মাদ্রাসা এবং একটি ইয়াতিমখানা রয়েছে।

এর সম্মুখের গেইটটি সুলাইমানাইয়া মসজিদের অনুকরনে করা হয়েছে। মসজিদটিতে একটি বড় গম্বুজ( উচ্চতা ৪৩ মিটার এবং ব্যাস ২৩.৫ মিটার), চারটি মিনার( উচ্চতা ২১০ ফিট), আটটি অতিরিক্ত গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটি অটোমান সম্রাজ্যের দুই দশকের স্থাপত্য উৎকর্ষতার নিদর্শন। এর ডিজাইন তুরস্কের Hagia Sophia চার্চের সাথে কিছুটা মিল করে করা হয়েছে। মসজিদটির আর্কিটেকচারাল ডিজাইন করেন Sedefkâr Mehmed Ağa নামক তুরস্কের একজন আর্কিটেক্ট।

মসজিদটির উঠানে প্রবেশের পথে একটি ভারি লোহার চেইন ঝুলানো আছে। সেই সময় শুধু মাত্র সুলতান এই উঠানে ঘোরা সহ প্রবেশ করতে পারতেন। তো এই চেইনটির কারনে তাকে মাথা নিচু করে ভিতরে প্রবেশ করতে হত। এটি করা হয়েছিল মহান আল্লাহর প্রতি সিজদাকে সম্মান করে।

মসজিদটির অভ্যন্তরে দুইট ভাগ করে কাজ করা হয়েছে। উপরের অংশে প্রতিটি কলামের মাথায় লাইন করে প্রায় ২০,০০০ হাজার খুব দুস্প্রাপ্য হাতে তৈরি টাইলস দ্বারা সাজানো হয়েছে। এগুলো তৈরি হয়েছিল বিখ্যাতইজনিক এ। এগুলো দ্বরা ছাদে প্রায় ৫০ ধরনের টিউলিপ ফুলের ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মসজিদটি তে দুশোর বেশি জানালা ব্যবহার করা হয়েছে যাদের ডিজাইন অত্যন্ত জটিল এবং সুন্দর। মসজিদটির দেয়ালে প্রচুর ক্যালগ্রাফির কাজ রয়েছে। প্রত্যেকটি ছোট গম্বুজে ১৪ টি করে জানালা এবং বড়টিতে ২৮ টি জানালা রয়েছে। জানালার কাচ গুলো সুলতানকে ভেনিসের শাষক উপহারস্বরুপ দিয়েছিলেন। বর্তমানে এই জানালাগুলো কে খুলে আধুনিক জানালা লাগানো হয়েছে।

মসজিটির সবচেয়ে সুন্দর বিষয় হল এর এরে মেহরাব টি। আকর্শনিয় পলিশিং মার্বেল দ্বারা মসৃন করে বাকানো একটি ডিজাইন করা হয়েছে। এছাার এর মিম্বারটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে মসজিদের যেকোন অবস্থান থেকে ইমামকে পরিস্কার ভাবে দেখা যায়। একসময মসজিদটিতে প্রচুর বাতি ছিল যেগুলো অস্ট্রিচ পাখির ডিম এবং ক্রিস্টাল বল দ্বারা সাজানো হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক বাতি সেগুলো স্থান দখল করেছে।
২০০৬ সলে পোপ ষোরশ বেনেডিক্ট এই মসজিদটি পরিদর্শন করেন। তিনি তার জুতা খুলে এখানে প্রবেশ করেন এবং টানা দুই মিনিট চোখ বন্ধকরে দারিয়ে থাকেন। তার সাথে মসজিদের ইমাম, তুরস্কের গ্র্যন্ড মুফতি ছিলেন। এটা কোন মুসলিম উপাসনালয়ে কোন খ্রিস্টান পোপের দ্বিতিয় ভ্রমন ছিল।

Comments

Popular posts from this blog

সবচেয়ে বড় জাহাজ গুলো

কিছু অবিশ্বাস্য ও কাল্পনিক ছবি