বিশ্বের ১০টি বৃহত্তম জাহাজের সমাধিস্থল

জাহাজের সমাধিস্থল বলতে সেসব জায়গাকে বোঝায় যেখানে জাহাজ ফেলে রাখা হয় ক্ষয়ের জন্য। এসব সমাধিস্থল দু ধরনের হয়ে থাকে। এক ধরনের কবরস্থানে জাহাজগুলোকে ফেলে রাখা হয় এর সব যন্ত্রাংশ আলাদা করার জন্য, আরেক ধরনের কবরস্থানে জাহাজকে সমুদ্রের ভেতর পরিত্যাক্ত অবস্থায় এমনভাবে ডুবিয়ে দেয়া হয় যেন প্রাকৃতিক কোনো ঘটনায় এটি পানির উপর উঠে আসতে না পারে। এছাড়া আরও কিছু ধরনের জাহাজের কবরস্থান রয়েছে। কিছু কিছু জাহাজকে ফেলে রাখা হলেও এদের পরিত্যক্ত হিসাবে গণ্য করা হয় না। আবার কিছু কিছু জাহাজকে চালু অবস্থায়ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এ ধরনের পরিত্যক্ত জাহাজ দ্বারা গঠিত কবরস্থান বিশ্বের বিভিন্ন অংশে দেখা যায়। মাঝে মাঝে শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে কবরস্থানের সাথে তুলনা করা হয়।
বিশ্বের ১০টি জাহাজের সমাধিস্থলের বর্ননা নিচে করা হলোঃ

১. Curtin Artificial Reef:
এটি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত একটি সমাধিস্থল। এটি অস্ট্রেলিয়ান সশস্ত্র বাহিনী, কুইন্সল্যান্ড পরিবহন বিভাগ এবং টাগ ও বার্জ কর্পোরেশনের সহযোগিতায় কুইন্সল্যান্ড এর সমুদ্রতলের রিসার্চ গ্রুপ (URGQ) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়।

২. Aral Sea:
Aral সাগর ইউরেশীয় দেশ উজবেকিস্তানের একটি সুপরিচিত শিপ গ্রেভ ইয়ার্ড। মাছ ধরার ক্রিয়াকলাপের জন্য এটি একসময় সমৃদ্ধশালী এবং জনাকীর্ণ স্থান ছিল। কিন্তু সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা শাসিত জায়গাটি সমাধিস্থলে পরিণত হওয়ার কারণ তারা জায়গাটিকে তুলা চাষের জন্য রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যার ফলে জায়গাটি জাহাজের সমাধিস্থল হয়ে ওঠে। জাতিসংঘের মতে Aral সাগর বর্তমানে সব থেকে বড় জাহাজের সমাধিস্থল এবং এটি ঐ এলাকার বাস্তুসংস্থানের ব্যাপকভাবে ক্ষতিসাধন করছে।

৩. Gadani:
এটি পাকিস্তানের করাচির কাছাকাছি অবস্থিত। Gadani বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম জলযানের সমাধিস্থল। পূর্ববর্তী আর্থিক বছরে প্রায় ১০৭টি জাহাজের শুধুমাত্র বাইরের অংশ খুলে আলাদা করা হয়। এখানে জাহাজের সব যন্ত্রাংশ খোলার জন্য প্রায় ১০০টি প্লট রয়েছে।

৪। Alang:
ভারতীয় উপমহাদেশের ভেতর একে সর্ববৃহৎ জাহাজের সমাধিস্থল বলা হয়। এটি ভারতের গুজরাট প্রদেশে অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় ৫০% জাহাজ ভাঙ্গার কাজ এখানে হয়ে থাকে। এখানে জাহাজ ভাঙ্গার কাজ ১৯৮৩ সালের দিকে শুরু হয় এবং আজ প্রায় তিন দশক পর বর্তমানে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের কর্মীদের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠা শুরু হয়েছে।



৭. Bikini Atoll:
বিকিনি প্রবালপ্রাচীর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজের জন্য ব্যবহৃত হতো। গবেষক এবং স্কুবা-ডাইভারদের এর জন্য এটি খুবই জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানকার প্রবালপ্রাচীর যুদ্ধের সময়কার কার্যক্রমের কারণে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি জানা গেছে যে প্রবালপ্রাচীর এর প্রবালগুলো পুনরায় বৃদ্ধি এবং পুনরুত্থিত হচ্ছে।

৮. Jervois Beach:
অ্যাডিলেড পোর্টে অবস্থিত Jervois বীচকে ১৯০০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জাহাজের সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু অধিকাংশ জাহাজ সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা হয়েছে তাই বীচে এমন কোন কিছু অবশিষ্ট নেই যার কারণে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হতে পারে। যাই হোক বর্তমানে এখনও চারটি জাহাজ এখানে আছে যাদেরকে ভাঁটার সময় তীর থেকে দেখা যায়।

৯. Skeleton Coast:
এটি নামিবিয়ার একটি জাহাজ সমাধিস্থল। এটি স্কেলেটন কোস্ট ন্যাশনাল পার্ক (১৯৭৩ সালে নামকরণ) হিসেবে পরিচিত। এ এলাকাটি দুর্ভেদ্য কুয়াশা এবং ঝড়ের কারণে সুপরিচিত। অনেক জাহাজ এখানে এসে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। এজন্য অনেকে এই সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্কেলেটন কোস্টকে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রেভইয়ার্ড বলে থাকেন। ঝড় এবং কুয়াশার কারণে অনেক জাহাজের শুধুমাত্র খোলস এখানে দেখতে পাওয়া যায়। এটি Ugab নদীর মুখে উৎপন্ন হয়ে অ্যাঙ্গোলার সীমানার কাছে অবস্থিত Kunene নদী পর্যন্ত প্রসারিত।

১০. Bay of Nouadhibou:
মৌরিতানিয়ায় অবস্থিত এই স্থানকে দ্ব্যার্থহীনভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রেভইয়ার্ড হিসাবে গণ্য করা হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০০ এর অধিক জাহাজ এ সমাধিস্থলে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তবে অন্যান্য উল্লিখিত সমাধিস্থল থেকে এটি একটু ভিন্ন। Nouadhibou সমাধিস্থল তৈরি হয়েছে মূলত মৌরিতানিয়ান কতৃপক্ষের অর্থলিপ্সার কারণে। তারা যে কোনো জাহাজ এই উপসাগর অঞ্চলে ডাম্পিং এর অনুমতি দিয়ে দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে জাহাজের সমাধিস্থলগুলো পরিবেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সমাধিগুলোর জন্যে হাজার হাজার বছর ধরে তৈরি মহাসাগরীয় বাস্তুতন্ত্র এবং বাস্তব্যবিদ্যা বর্তমানে হুমকির মুখে। গ্রিনপিস এর মতো আরো অনেক সংগঠন মানুষকে জাহাজের কবরস্থান এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বোঝানোর জন্য বিপুল প্রচেষ্টা করছে। আজকের দিনে এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে সকল শিপিং কোম্পানি ও সরকারি কর্তৃপক্ষ জাহাজ খুলে ফেলার জন্য শুকনো ডক ব্যবহার করবে। তবুও অনেক জাহাজকে খুলে ফেলার জন্য শুকনো ডক ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন এটি জাহাজের সমাধিস্থল চেইন এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটি অংশ হয়ে যায়। আরও অধঃপতনের হাত থেকে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য জাহাজের কবরস্থান বা সমাধিস্থলের সীমিত ও সংকুচিত ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
Comments
Post a Comment