পৃথিবীর বিস্বয়কর কিছু স্থাপনা-ইটাইপু ড্যাম

ইটাইপু নামটা নিয়া আমার প্রথম ফারকা লাগে। কিরে এইটা আবার কেমন নাম। পরে জানলাম নামটা নেয়া হইছে ড্যামটার পাশেই একটা দ্বীপ এর থেকে। গুয়ারানি ভাষা থেকে এই শব্দ টা এসেছে। এই ভাষা টা মুলত ব্যবহৃত হয় প্যারাগুয়ের টুপি গুয়ারানি সম্প্রদায়ের মধ্যে। ইটাইপু কথাটার অর্থ হচ্ছে "যে পাথরে শব্দ হয়"("The Sounding Stone")।

ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের সিমানাতে অবস্থিত পারানা নদীর উপরে এই ড্যামটি অবস্থিত। দুটি দেশই এর মুল মালিক। এটি একটি হাইড্রোলিক ড্যাম। ১৯৬০ সালে ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের মধ্যে একটা আলোচনা শুরু হয় পারানা নদীর উপর একটি হাইড্রোলিক ড্যাম নির্মান করা নিয়ে। তবে তার দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯৬৬ সালে তাদের উভয় পক্ষের মধ্যে "Iguaçu Act" নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যার মাধ্যমে মুলত ড্যামটি অফিসিয়াললি আলোর মুখ দেখতে শুরু করে।চুক্তির মাধ্যমে মুলত এর মালিকানা নির্ধারিত হয়। এর পর ১৯৭৩ সালে আবার চুক্তি হয় যার বিষয় ছিল এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ এর ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। ২০২৩ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তবে এটা নিয়ে অলরেডি বিশাল রাজনৈতিক ক্যাচাল শুরু হয়েগেছে দুই দেশের মধ্যে।

এটি মুলত পৃথিবীর ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ হাইড্রোলিক ড্যাম। এই ড্যামটির মুল বৈশিষ্ট হল এধরনের স্ট্রাকচারএর মধ্যে এটিই প্রথম এবং অনুসরনিয়। ১৯৭০ সালে একটি আন্তর্যাতিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমেInternational Energy Consultants Organisation (IECO) এবং ELC Electroconsult নামক দুটি আন্তর্যাতিক সংস্থা প্রযেক্টএর কাজ নিয়ে নেয়। ১৯৭৪ সালে প্রযেক্ট এর কন্সট্রাকশন এর কাজ আরম্ভহয়। প্রযেক্ট ডিজাইন করেন ইটালিয়ন ইন্জিনিয়ার piero sembenelli এবং তার ফার্ম SC SEMBENELLI CONSULTING পৃথিবীর অস্টম বৃহত্তম নদীর গতিপথ পুরোপুরি পরিবর্তন করে এই ড্যামটি নির্মান করা হয়। প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন মাটি এবং পাথর সরাতে হয়েছে। এটি নির্মন করতে যে পরিমান কংক্রিট প্রয়োজন হয়েছে তা দিয়ে ২১০ টি মারাকানা স্টেডিয়াম (ব্রাজিলের সবেচেয়ে বড়) নির্মন করা যাবে আনায়সে। আর যে পরিমান রড লেগেছে তা দিয়ে মোটামুটি ৩১০ টি আইফেল টাওয়ার তৈরি করা যাবে। প্রায় ৪০,০০০ নির্মন শ্রমিক প্রয়োজন হয়েছে স্থাপনাটি নির্মানের জন্য।


এক নজরে দেখে নেই এর বৈশিষ্ট গুলো
১) দৈর্ধ ২৩৭৩৭ ফিট(প্রায় ৭.২৩ কিমি) এবং কন্সট্রাকশন প্রস্থ প্রায় ৭৩৮ ফিট।
২) মুলত চারটি ভিন্ন ভিন্ন ড্যামের সম্মিলনে এটি সৃস্ট। কংক্রীটএর তিনটি ছোট বড় ড্যাম ছারাও এখানে একটি মাটির ড্যাম রয়েছে।
৩) এর স্পিল ওয়ের দৈর্ঘ ১৫০০ ফিট(যেখান থেকে পানি নিস্কাশিত হয় মানে নিচের দিকের ঢাল)
৪) এখানকার ১৪ টি টারবাইন এর স্পিলওয়ে থেকে যে পরিমান পানি নিস্কাশন হয় তার পরিমান হল ৬২ হাজার ঘন মিটার পার সেকেন্ট।
৫) এই ড্যাম থেকে ব্রাজিল যে পরিমান বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তা যদি আমাদের কুইক রেন্টাল রা উৎপাদন করে তাহলে প্রতি দিন প্রায় সারে চার লক্ষ ব্যরেল তেল পোরাইতে হত।
৬) এর উচ্চতা একটা ৬৫ তলা ভবন এর সমান। মনে প্রায় ৬৫০ ফিট উচু।

এবার আসি এর বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে। থ্রি জর্জেস ড্যাম এর নির্মান এর আগ পর্যন্ত এটিই ছিল পৃথিবির সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র। এর মুল উদ্দেশ্যই ছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। আসুন বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কে কিছু তথ্য জানি।
১) সর্বমোট ১৪ টি ৭০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন টারবাইন রয়েছে।
২) সর্বোমোট ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
৩) ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের সিমানাতে অবস্থান হবার কারনে দেশ দুটি বিদ্যুৎ ভাগাভাগি করে নেয়।(যেটা ভারত আমাদের সাথে করতে পারে মাগার আমাদের কিছু নেতা নেত্রিগো ভাব দেখলে মনে হয় পারলে কাপরটা আলগাইয়া দিয়ে আসে)
৪) প্যারাগুয়ের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ৯০% এবং ব্রাজিলের ১৯% পুরণ করে এই ড্যামটি।( প্যারাগুয়ে দেশটি এটার উপর পুরোপুরি নির্ভরশিল)


আমি সবসময় একটা কথায় বিশ্বাষ করি। প্রকৃতি অস্বাভাবিক কোন কিছু কখনোই গ্রহন করে না। এই ড্যামটি নির্মান করতে বিশাল এলাকার বনভুমি উজার করতে হয়েছে। Guaíra Falls নামক একটা চমৎকার প্রকৃতিক ঝরনা ডিনামাইট দিয়ে উরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সব চেয়ে খারাপ কাজ করছে প্রায় ১০ হাজার আদিবাসি যারা বিগত ১০০০ বছর ধরে এই অন্চলে বসবাস করছিল তাদেরকে গৃহহীন করা হয়। পৃথিবী হারায় কিছ বিলুপ্ত প্রায় প্রানি। এছারা জোর করে নদির গতিপথ পরিবর্তনের ফলে আগের গতি পথের এলাকায় একটা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটেছে।

Comments

Popular posts from this blog

সবচেয়ে বড় জাহাজ গুলো

কিছু অবিশ্বাস্য ও কাল্পনিক ছবি