ইতালির পেটের মধ্যে একখণ্ড স্বাধীন দেশ

রোমের তাইবার নদীর তীরে অবস্থিত ভেটিকানের আয়তন আট বর্গ একর এলাকাজুড়ে। মোট জনসংখ্যা মাত্র হাজার খানেক। যাদের মধ্যে মাত্র ৪৫০ জন ভেটিকানের নাগরিক। বিভিন্ন প্রয়োজনে বাকিদের অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ভেটিকানের প্রবেশদ্বার ৫টি। সবগুলো পথ ভেটিকান রক্ষী দ্বারা সার্বক্ষণিক সুরক্ষিত। তবে ধর্মনেতা বা পোপের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা সবাই সুইস (সুইজারল্যান্ড) নাগরিক। তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। মাইকেল এন্জেলোর ডিজাইনে তৈরি ট্রেডিশনাল পোশাক পরে তারা পোপের নিরাপত্তা দিয়ে আসছে বহুবছর আগে থেকে। সমালোচকদের ভাষায়- একেই বলে ডিসক্রিমিনেশন। ক্যাথলিকদের তীর্থস্থান ভেটিকান ৪র্থ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পোপীয় রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিতি পেত। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৯ সালে ল্যাতেরান চুক্তির মাধ্যমে। এর নিজস্ব পতাকা সোজাসুজি দুই অংশে বিভক্ত। পতাকা দণ্ডের পাশে হলুদ এবং অন্যাংশে সাদার মাঝে চাবি ও পোপের মুকুট অঙ্কিত। ভেটিকানে বসবাস করা, নাগরিকত্ব অর্জন বা হারানো- সব কিছুই পরিচালিত হয় ল্যাতেরান চুক্তির নিয়ম মোতাবেক। তবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পোপের হাতে রয়েছে সর্বময় ক্ষমতা। তিনি এর সকল প্রকার আইন প্রণয়ন, কার্যকর এবং বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা ভোগ করেন। পোপের পদ শূন্য হলে পরবর্তী পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কার্ডিনাল পরিষদ সকল দায়িত্ব পালন করে।
সাধারণভাবে কার্ডিনাল পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১১৫ জন্য। বর্তমানের কার্ডিনাল পরিষদে বিশ্বের ৪৮টি দেশের ধর্ম যাজকরা রয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (২০১৩) অতীত ৬০০ বছরের ইতিহাস ভেঙে জীবদ্দশায় পোপের আসন থেকে পদত্যাগ করেন জার্মান পোপ বেনেদেত্ত। তার আগে সর্বশেষ পদত্যাগের ঘটনা ঘটে ১২৯৪ সালে। পোপ জোভান্নি পাওলোর মৃত্যুর পর বেনেদেত্ত ২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল ২৬৫তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ৭ বছর ৩১৫ দিন পোপের দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণভাবে একজন পোপ নির্বাচিত হন আজীবনের জন্য। তবে পোপ যেহেতু সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ এবং প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন, তাই তিনি নিজ ক্ষমতায় পদত্যাগও করতে পারেন। ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাস বলে- সর্বশেষ পদত্যাগী পোপ বেনেদেত্তর আগে আরও ৯ জন পোপ পদত্যাগ করেছিলেন। তাদের শেষ ৪ জন পদত্যাগ করেন তৃতীয় শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে। ২৩৫ সালে সান পনতেইন নামের একজন পোপের পদত্যাগের মধ্যদিয়েই পোপীয় পদত্যাগের সূচনা হয় বলে জানা যায়।
জার্মান পোপ বেনেদেত্ত পদত্যাগের পর ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন পোপ সান ফ্রানসেসকো। তার আসল নাম জর্জো মারিও বেরগোলিও। ভেটিকানের প্রথা অনুসারে তিনি পোপ নির্বাচিত হওয়ার পরে নতুন নাম গ্রহণ করেন, সান ফ্রানসেসকো। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন। গত ১ হাজার ২৭২ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম অ’ইউরোপীয় বা লাতিন আমেরিকান ব্যক্তি পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন। পোপ নির্বাচনের নিয়মানুসারে কোনো পোপ মারা গেলে বা পদত্যাগ করলে কার্ডিনালরা সান পিয়েত্র বাজিলিকায় (ভেটিকান চার্চ) রুদ্ধদ্বার বৈঠক এবং ভোটাভুটি করেন। নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগে পর্যন্ত বৈঠকের কোনো তথ্য বাইরে প্রকাশ করা হয় না। কার্ডিনালরা কেউ নিজের ভোট নিজেকে দিতে পারেন না। ১১৫ জনের মধ্যে যে কার্ডিনাল দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পান তিনিই হন পরবর্তী জীবনের জন্য ১২০ কোটি ক্যাথলিকের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু এবং ভেটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান। যতক্ষণ কোনো একজন কার্ডিনালের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পড়ে, ততক্ষণ ভোটাভুটি চলতে থাকে। পোপ নির্বাচিত হলে তাৎক্ষণিক বাইরে অপেক্ষমাণ মানুষকে জানান দিতে সান পিয়েত্র বাজিলিকার চিমনিতে সাদা ধোঁয়া দেয়া হয়। আর না হলে ভোটাভুটির কাগজ পুড়িয়ে কালো ধোঁয়া।
ভেটিকানের গোটা এলাকা ১৯৫৪ সালের ১৪ মে হাগ চুক্তির অধীনে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যেন যুদ্ধ হলেও এর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন থাকে। ভেটিকানকে ১৯৭২ সালের নভেম্বরে বিশ্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ইউনেস্ক চুক্তির মাধ্যমে। ভেটিকান রাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যাংকিং পদ্ধতি, জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পর্যবেক্ষক দল, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বেতার কেন্দ্র, পোপের নিরাপত্তার জন্য সুইস নিরাপত্তা দল এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসংস্থাসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অন্যান্য সাধারণ সম্পর্ক। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ এবং ভেটিকানের মধ্যে কূটনৈতিক চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ভেটিকানের দূতাবাস স্থাপন করা হয়। সে সময় পোপ পৌল ষষ্ঠের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম ঢাকায় পাঠানো হয় আর্যবিশপ এডুয়ার্ড ইদ্রিসকে। তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় পোপীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা দেখাতে ঢাকায় আসেন আর্যবিশপ উইলিয়াম ও হেনরি দা রিয়েদমার্টিন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত সব সময় ভেটিকান বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়ে এসেছে। বাংলাদেশও তার যোগ্য মর্যাদা দিতে কখনো কার্পণ্য করেনি।
ভেটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলের পুরাটাই মাইকেল আনজেলোর চিত্রকর্ম দিয়ে ভরপুর। এখানেই রয়েছে শিল্পীর সেই বিখ্যাত সৃষ্টি ‘লাস্ট জাজমেন্ট’। রাফায়েল কক্ষ, বর্জিয়া এপার্টমেন্ট যেদিকেই চোখ যায় শুধু চিত্রকর্ম আর চিত্রকর্ম। বিশ্বখ্যাত এত এত চিত্রকর্ম দেখে যেকোনো পর্যটকের মনেই ভালো লাগার উদয় হবে। যেসব শিল্পীর চিত্রকর্ম চেনা যায় তারা প্রায় সবাই রেঁনেসার যুগে বিখ্যাত ছিলেন। এরা হলেন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, পেরুজিয়ানো, লুকা, রোসেলি, বোতেচেলি, গারলেদিয় প্রমুখ।
সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদ দেখতে গেলে ঘাড় ব্যথা হয়ে যেতে পারে। এর উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এখানে ছবি তোলা এবং কথা বলা নিষেধ। ভাববার বিষয় প্রাচীন আমলে এত ভারী এবং দীর্ঘ স্তম্ভের ওপর কীভাবে স্থাপন করা হলো এই বিশাল কারুকাজ খচিত ছাদ? এমন প্রশ্ন মাথায় আসা একেবারেই অমূলক নয়। চ্যাপেলের পাশেই পোপের বাড়ি। সেখানে জোকারের মতো ট্রেডিশনাল পোশাক পরে, হাতে বর্শা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় পোপের সুইস প্রহরীদের। পারতপক্ষে তারা নড়াচড়াও করে না। একদম মূর্তির মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।
ভেটিকান জাদুঘরে রয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার অমূল্য পাণ্ডুলিপি এবং ১০ লাখেরও বেশি বই। মূল ভবনের একদম নিচে মৃত পোপদের কবর বা মমি। সেখানে পোপ দ্বিতীয় জন পাওলোসহ মৃত অন্যান্য পোপ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মনেতাদের সমাধি রয়েছে। প্রত্যেক সমাধির গায়ে মৃত ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখা রয়েছে এবং সমাধির ওপর পাথর দিয়ে মৃত ব্যক্তির অবয়ব তৈরি করা হয়েছে। ২৮৪টি পিলারের মাঝখানে ভেটিকানের প্রধান স্কয়ার পিয়াচ্ছা সান পিয়েত্র বা সেন্ট পিটার্স স্কয়ারটি তৈরি করা হয়েছে ইলিপটিক্যাল আকৃতিতে।
জানা থাকা ভালো, স্বাধীন ইতালির পেটের মধ্যে ভেটিকান ছাড়া আরও একটা সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র রয়েছে। তার নাম সান মারিনো। আয়তনে ভেটিকানের মতোই ছোট। জনসংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। তবে প্রচুর পর্যটক এবং ওই রাষ্ট্রের বাইরে থেকে অর্থাৎ ইতালি থেকে প্রচুর মানুষ যায় সেখানে ব্যবসা করতে। এর জন্য সান মারিনোর সরকারকে কর দিতে হয়। সান মারিনোয় আগ্নেয় অস্ত্র কিনতে লাইসেন্স দরকার হয় না। কিন্তু ওই অস্ত্র নিয়ে সান মারিনোর বাইরে পা দিলেই আর রক্ষে নেই। ইতালীয় কারাবিনিয়েরির (বিশেষ পুলিশ) হাতে পাকড়াও হতে হবে। ভেটিকান বা সান মারিনোয় প্রবেশের জন্য আলাদা কোনো ভিসা বা অনুমোদন দরকার হয় না। ইতালিতে প্রবেশের বা বসবাসের অনুমতি থাকলেই হয়। সকল ধর্মের বর্ণের সব মানুষের জন্য ভেটিকানের দরজা উন্মুক্ত। এর অন্দরে প্রবেশের জন্য কোনো টিকেট দরকার হয় না। তবে ভেটিকান জাদুঘরে যেতে হলে টিকেট কিনতে হয়। ভেটিকান দাবি করে জাদুঘরের টিকেট বিক্রয়ের টাকাই ভেটিকানের প্রধান আয়ের উৎস।
সাধারণভাবে কার্ডিনাল পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১১৫ জন্য। বর্তমানের কার্ডিনাল পরিষদে বিশ্বের ৪৮টি দেশের ধর্ম যাজকরা রয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (২০১৩) অতীত ৬০০ বছরের ইতিহাস ভেঙে জীবদ্দশায় পোপের আসন থেকে পদত্যাগ করেন জার্মান পোপ বেনেদেত্ত। তার আগে সর্বশেষ পদত্যাগের ঘটনা ঘটে ১২৯৪ সালে। পোপ জোভান্নি পাওলোর মৃত্যুর পর বেনেদেত্ত ২০০৫ সালের ১৯ এপ্রিল ২৬৫তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ৭ বছর ৩১৫ দিন পোপের দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণভাবে একজন পোপ নির্বাচিত হন আজীবনের জন্য। তবে পোপ যেহেতু সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ এবং প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখেন, তাই তিনি নিজ ক্ষমতায় পদত্যাগও করতে পারেন। ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাস বলে- সর্বশেষ পদত্যাগী পোপ বেনেদেত্তর আগে আরও ৯ জন পোপ পদত্যাগ করেছিলেন। তাদের শেষ ৪ জন পদত্যাগ করেন তৃতীয় শতাব্দী থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে। ২৩৫ সালে সান পনতেইন নামের একজন পোপের পদত্যাগের মধ্যদিয়েই পোপীয় পদত্যাগের সূচনা হয় বলে জানা যায়।
জার্মান পোপ বেনেদেত্ত পদত্যাগের পর ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ২৬৬তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন পোপ সান ফ্রানসেসকো। তার আসল নাম জর্জো মারিও বেরগোলিও। ভেটিকানের প্রথা অনুসারে তিনি পোপ নির্বাচিত হওয়ার পরে নতুন নাম গ্রহণ করেন, সান ফ্রানসেসকো। ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন। গত ১ হাজার ২৭২ বছরের ইতিহাসে তিনিই প্রথম অ’ইউরোপীয় বা লাতিন আমেরিকান ব্যক্তি পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন। পোপ নির্বাচনের নিয়মানুসারে কোনো পোপ মারা গেলে বা পদত্যাগ করলে কার্ডিনালরা সান পিয়েত্র বাজিলিকায় (ভেটিকান চার্চ) রুদ্ধদ্বার বৈঠক এবং ভোটাভুটি করেন। নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগে পর্যন্ত বৈঠকের কোনো তথ্য বাইরে প্রকাশ করা হয় না। কার্ডিনালরা কেউ নিজের ভোট নিজেকে দিতে পারেন না। ১১৫ জনের মধ্যে যে কার্ডিনাল দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পান তিনিই হন পরবর্তী জীবনের জন্য ১২০ কোটি ক্যাথলিকের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু এবং ভেটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান। যতক্ষণ কোনো একজন কার্ডিনালের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পড়ে, ততক্ষণ ভোটাভুটি চলতে থাকে। পোপ নির্বাচিত হলে তাৎক্ষণিক বাইরে অপেক্ষমাণ মানুষকে জানান দিতে সান পিয়েত্র বাজিলিকার চিমনিতে সাদা ধোঁয়া দেয়া হয়। আর না হলে ভোটাভুটির কাগজ পুড়িয়ে কালো ধোঁয়া।
ভেটিকানের গোটা এলাকা ১৯৫৪ সালের ১৪ মে হাগ চুক্তির অধীনে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যেন যুদ্ধ হলেও এর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অক্ষুন্ন থাকে। ভেটিকানকে ১৯৭২ সালের নভেম্বরে বিশ্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ইউনেস্ক চুক্তির মাধ্যমে। ভেটিকান রাষ্ট্রের রয়েছে নিজস্ব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যাংকিং পদ্ধতি, জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পর্যবেক্ষক দল, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বেতার কেন্দ্র, পোপের নিরাপত্তার জন্য সুইস নিরাপত্তা দল এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসংস্থাসমূহের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অন্যান্য সাধারণ সম্পর্ক। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ এবং ভেটিকানের মধ্যে কূটনৈতিক চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ভেটিকানের দূতাবাস স্থাপন করা হয়। সে সময় পোপ পৌল ষষ্ঠের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথম ঢাকায় পাঠানো হয় আর্যবিশপ এডুয়ার্ড ইদ্রিসকে। তিনি ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় পোপীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা দেখাতে ঢাকায় আসেন আর্যবিশপ উইলিয়াম ও হেনরি দা রিয়েদমার্টিন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত সব সময় ভেটিকান বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখিয়ে এসেছে। বাংলাদেশও তার যোগ্য মর্যাদা দিতে কখনো কার্পণ্য করেনি।
ভেটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলের পুরাটাই মাইকেল আনজেলোর চিত্রকর্ম দিয়ে ভরপুর। এখানেই রয়েছে শিল্পীর সেই বিখ্যাত সৃষ্টি ‘লাস্ট জাজমেন্ট’। রাফায়েল কক্ষ, বর্জিয়া এপার্টমেন্ট যেদিকেই চোখ যায় শুধু চিত্রকর্ম আর চিত্রকর্ম। বিশ্বখ্যাত এত এত চিত্রকর্ম দেখে যেকোনো পর্যটকের মনেই ভালো লাগার উদয় হবে। যেসব শিল্পীর চিত্রকর্ম চেনা যায় তারা প্রায় সবাই রেঁনেসার যুগে বিখ্যাত ছিলেন। এরা হলেন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, পেরুজিয়ানো, লুকা, রোসেলি, বোতেচেলি, গারলেদিয় প্রমুখ।
সিস্টিন চ্যাপেলের ছাদ দেখতে গেলে ঘাড় ব্যথা হয়ে যেতে পারে। এর উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এখানে ছবি তোলা এবং কথা বলা নিষেধ। ভাববার বিষয় প্রাচীন আমলে এত ভারী এবং দীর্ঘ স্তম্ভের ওপর কীভাবে স্থাপন করা হলো এই বিশাল কারুকাজ খচিত ছাদ? এমন প্রশ্ন মাথায় আসা একেবারেই অমূলক নয়। চ্যাপেলের পাশেই পোপের বাড়ি। সেখানে জোকারের মতো ট্রেডিশনাল পোশাক পরে, হাতে বর্শা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় পোপের সুইস প্রহরীদের। পারতপক্ষে তারা নড়াচড়াও করে না। একদম মূর্তির মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।
ভেটিকান জাদুঘরে রয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার অমূল্য পাণ্ডুলিপি এবং ১০ লাখেরও বেশি বই। মূল ভবনের একদম নিচে মৃত পোপদের কবর বা মমি। সেখানে পোপ দ্বিতীয় জন পাওলোসহ মৃত অন্যান্য পোপ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মনেতাদের সমাধি রয়েছে। প্রত্যেক সমাধির গায়ে মৃত ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখা রয়েছে এবং সমাধির ওপর পাথর দিয়ে মৃত ব্যক্তির অবয়ব তৈরি করা হয়েছে। ২৮৪টি পিলারের মাঝখানে ভেটিকানের প্রধান স্কয়ার পিয়াচ্ছা সান পিয়েত্র বা সেন্ট পিটার্স স্কয়ারটি তৈরি করা হয়েছে ইলিপটিক্যাল আকৃতিতে।
জানা থাকা ভালো, স্বাধীন ইতালির পেটের মধ্যে ভেটিকান ছাড়া আরও একটা সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র রয়েছে। তার নাম সান মারিনো। আয়তনে ভেটিকানের মতোই ছোট। জনসংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। তবে প্রচুর পর্যটক এবং ওই রাষ্ট্রের বাইরে থেকে অর্থাৎ ইতালি থেকে প্রচুর মানুষ যায় সেখানে ব্যবসা করতে। এর জন্য সান মারিনোর সরকারকে কর দিতে হয়। সান মারিনোয় আগ্নেয় অস্ত্র কিনতে লাইসেন্স দরকার হয় না। কিন্তু ওই অস্ত্র নিয়ে সান মারিনোর বাইরে পা দিলেই আর রক্ষে নেই। ইতালীয় কারাবিনিয়েরির (বিশেষ পুলিশ) হাতে পাকড়াও হতে হবে। ভেটিকান বা সান মারিনোয় প্রবেশের জন্য আলাদা কোনো ভিসা বা অনুমোদন দরকার হয় না। ইতালিতে প্রবেশের বা বসবাসের অনুমতি থাকলেই হয়। সকল ধর্মের বর্ণের সব মানুষের জন্য ভেটিকানের দরজা উন্মুক্ত। এর অন্দরে প্রবেশের জন্য কোনো টিকেট দরকার হয় না। তবে ভেটিকান জাদুঘরে যেতে হলে টিকেট কিনতে হয়। ভেটিকান দাবি করে জাদুঘরের টিকেট বিক্রয়ের টাকাই ভেটিকানের প্রধান আয়ের উৎস।
Comments
Post a Comment