ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক ম্যাগাজিনের কিছু অসাধারণ ছবি
এ বছর ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক তার প্রতিষ্ঠার ১২৫তম বার্ষিকী পালন করেছে। সারা বিশ্বের লাখ লাখ ফটোগ্রাফার প্রতিদিন হাজার হাজার (কমই বললাম মনে হয়) ফটো আপলোড করছে এখানে। সেখান থেকে কিছু ছবি ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিকের ফেসবুক পেইজে পোস্ট হয়।
প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের আকাশে আতশবাজির প্রদর্শনী। এই ছবিটি ১৯৮৯ সালের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের জুলাই সংখ্যার কভার ফটো ছিল।
ফটোগ্রাফারঃ জেমস স্ট্যানফিল্ড
মায়া রহস্যের অতল জলে। মেক্সিকোর ইউকাটান পেনিনসুলার তুলুম নগরে অবস্থিত এই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই গভীর সিঙ্কহোলটি যাকে cenote বলে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের ফেসবুক পেইজে এটি লক্ষাধিক লাইক পায় (আমারটাসহ) এবং শেয়ার করা হয় চব্বিশ হাজারের উপরে।
ফটোগ্রাফারঃ পল নিকলেন
স্পেনের গ্যালিসিয়া সৈকতের একচোখা (অর্থাৎ একদিকে চোখা) পাথরখণ্ড। দূর পাহাড়ের নয়নাভিরাম স্থির পশ্চাদ্পট আর শৈশবের উচ্ছল গতিময়তার অপূর্ব মিশেলের এই ছবিটি ফেসবুকে সাড়ে তিন হাজারের উপরে শেয়ার হয়।
ফটোগ্রাফারঃ জিম রিচার্ডসন
ফলস কিভার বজ্রঝড়। মাথা আউলায় দেবার মতো একটা ছবি। তবে এটি ফটোগ্রাফারের আকাঙ্খিত কিছু ছিল না, ছিল অপ্রত্যাশিত একটা ব্যাপার। ছবির ফটোগ্রাফার আমেরিকার উতাহ অঙ্গরাজ্যের এই স্থানটিতে এসেছিলেন মিল্কিওয়ের ছবি তুলতে। সেটা না তুলতে পারলেও যা পেরেছেন তাই তাকে এ বছরের ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলার ফটো কন্টেস্টের দ্বিতীয় পুরস্কার এনে দেয়। ছবিতে দুই ধরণের প্যাটার্ন পরিলক্ষিত হয়েছে। একটু খেয়াল করে দেখুন- অভ্যন্তরীণ উষ্ণ আভা আর বাইরের বেগুনী আলোকচ্ছটা।
ফটোগ্রাফারঃ ম্যাক্স সেইগাল
সুমেরুর সাদা বাবুর সাথে চোখাচোখি। ছবির এই হাতটি ফটোগ্রাফারের নিজেরই। উত্তর মেরুর কোন এক সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখলেন উনি তাবুর অদূরে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে আছেন। ওনাদের দুজনের এই চোখাচোখির স্থান হল রাশিয়ার ফ্রানয্ জোসেফল্যান্ড।
ফটোগ্রাফারঃ বর্গিয়া আউশলান। এই নরওয়েজিয়ান কিন্তু একজন বিখ্যাত মেরু অভিযাত্রিক। তিনিই সর্বপ্রথম একাকী, কারো সাহায্য ছাড়া (unassisted) আর্কটিক অঞ্চল পাড়ি দেন।
এটি একটি iconic ছবি যেখানে এক ডুবুরি খুব কাছ থেকে একটি তিমিকে পর্যবেক্ষণ করছেন। এখানে যতগুলো ছবি আমি আপলোড করেছি তার মধ্যে এটিই আমার সবচেয়ে কম ভালো লেগেছে
ফটোগ্রাফারঃ ব্রায়ান স্কেরী
সাগর সৈকতের মোহনীয় আভা। আইসল্যান্ডের এই জায়গাটিকে বলা হয় গ্লেসিয়াল রিভার লেগুন। এক অপার রহস্যময়তার হাতছানি যেন এই ছবিটার মধ্যে প্রোথিত আছে।
ফটোগ্রাফারঃ সোফি কার
নিসর্গসকাশে নিঃসঙ্গতার মাঝে আবাস। লোভ করলে পাপ হয় এই কথাটা এই ছবির ক্ষেত্রে ঠিক যায় না। কোন ক্ষেত্রে লোভ হবে না বলুন! এমন জায়গায় যাওয়ার লোভ, এমন জায়গার ছবি তোলার লোভ, এমন জায়গায় থাকার লোভ- কোনটা রেখে কোনটা বলবেন। দ্রিনা নদীর মাঝে অবস্থিত এই নিঃসঙ্গ বাড়ীটি সার্বিয়ার বায়িনা বাস্তা নামের এক শহরের কাছাকাছি অবস্থিত।
ফটোগ্রাফারঃ আইরিন বেকার
ম্যানহাটনের আতশবাজি। এই উৎসবটি আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইতে হয়। যেসব ছবিতে ফায়ারওয়ার্কসের বিষয় মুখ্য থাকে সেগুলোর জন্য দীর্ঘ এক্সপোজার আর স্লো শাটার স্পীড দরকার। এটা আমি বলছি না; এটা এই ছবির ফটোগ্রাফারের কথা। ওনারা আরো বলেছেন, ক্যামেরাটাকে একটা শক্তপোক্ত ট্রাইপডে রেখে শাটার রিলিস কর্ড ব্যবহার করা উচিৎ। এরকম আরো অনেক টিপস ওনারা দিয়েছেন যা পাবেন এখানে ।
ফটোগ্রাফারঃ ডায়ানে কুক এবং লেন জ্যানশে
নক্ষত্রের রাত। হুমায়ূন আহমেদের “নক্ষত্রের রাত” যেন ইস্টার আইল্যান্ডে এসে হাজির। ছবিটি দীর্ঘস্থায়ী এক্সপোজারে তোলা। এতো সুন্দর একটা ছবি তারপরও নাকি এটি নিয়ে ফটোগ্রাফারের কিছুটা আক্ষেপ আছে; এই যেমন- দীর্ঘস্থায়ী এক্সপোজার আর বেশী মাত্রায় সেন্সর নয়েজ।
ফটোগ্রাফারঃ কেভিন হু
নক্র সমাবেশ। কাটবেন নাকি সাঁতার এইসব নক্র অর্থাৎ কুমিরের সাথে!!! ইয়াকারে কাইম্যান প্রজাতির এই কুমিরগুলো কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে।
ফটোগ্রাফারঃ লুইসিয়ানো ক্যান্ডিসানি
চন্দ্ররহস্য। এটি ২০১৩ সালে সিয়াটলে ধারণকৃত অন্যতম বৃহৎ এবং উজ্জ্বলতম চাঁদ। সামনে যে টাওয়ারটিকে দেখতে পাচ্ছেন এটির নাম স্পেস নিডেল। ওয়াশিংটনের সিয়াটলে অবস্থিত এই অবসারভেশন টাওয়ারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় উচ্চতম (৬০৫ ফুট উঁচু) টাওয়ার। যাইহোক, ব্যাকগ্রাউন্ডের বিশাল চাঁদটিকে বলা হয় সুপারমুন- অন্য সময়ের চাইতে ৮% বেশী বড় আর ১৭% বেশী উজ্জ্বল দেখায় এই চাঁদ।
ফটোগ্রাফারঃ কুয়াইন টন
অব্যক্ত ভালোবাসা যা ছাড়িয়ে যায় ভাষা ও সংস্কৃতির সকল বন্ধন। এই ছবিটি ৫৬ হাজারের উপরে লাইক পেয়েছে আর শেয়ার হয়েছে ১১ হাজারের উপরে।
ফটোগ্রাফারঃ সন্দেশ কাদুর
কি গোল গোল চোখ!! ড্যাবড্যাবে চোখে মুখ বের করে তাকিয়ে থাকা এই তিন গ্রে মাউস লেমুরের বাবুটাইপ ছবিটি ডিউক লেমুর সেন্টারে তোলা।
ফটোগ্রাফারঃ ড্যাভিড হেয়ারিং
যেখানে ফটোগ্রাফার নিজেই জানতে চেয়েছেন কি হতে পারে এর ক্যাপশন, সেখানে আপনারাই বলুন না হয় কি হতে পারে সেটা। ছবিটি লাখের উপরে লাইক পায়।
ফটোগ্রাফারঃ জোনাথন ব্লেয়ার
নিয়ন গ্রিন অরোরা। চাঁদের ধার করা উজ্জ্বলতাকেও যেন হার মানিয়েছে আইসল্যান্ডের রেইকজ্যান্স পেনিনসুলায় তোলা এই অরোরা বোরিয়ালিসটি। অরোরা সাধারণত বিভিন্ন গ্যাস পার্টিকেলের সাথে সোলার পার্টিকেলের সংঘর্ষের কারণে তৈরি হয়। একইসাথে উচ্চতাটাও একটা ফ্যাক্টর। ছবির অরোরাটি ৬০ থেকে ১২০ মাইল ঊর্ধ্বাকাশে অক্সিজেনের সাথে সোলার পার্টিকেলের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
ফটোগ্রাফারঃ এলার্ট গ্রেটারসন
ক্যানাডিয়ান প্রেইরির ঘনীভূত মেঘমালা। স্টর্ম চেসিং করতে গিয়ে ফিলমোরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে সাচকাচুয়ানের এক মহাসড়কের উপর ছবিটি তোলা হয়েছিলো। ক্যামেরা ছিল ৫৫মিমি বেসিক লেন্সের পেনট্যাক্স কে২০০ডি; শাটার স্পীড ১/২০০ সেকেন্ড। এখন পর্যন্ত যতগুলো ছবি এখানে দিয়েছি তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশী লাইক পায়। পৌনে দুই লাখের উপরে লাইক আর প্রায় ৫১,০০০ বার শেয়ার করা হয় ছবিটি। তবে কেন যেন আমার কাছে তেমন একটা ভালো লাগে নি ছবিটি!
ফটোগ্রাফারঃ গুঞ্জন সিনহা
মনে আছে সেই তেলেগু মুভিটার কথা যেখানে একটা সামান্য মাছি হয়ে নায়ক কি কাজটাই না করেন। কি যেন নামটা মুভিটার? ওহ, মনে পড়েছে…… Eega । ছবিটির ক্যাপশনটাও সুন্দর- Fly cap for a vine snake। ছবির জায়গাটি কলোম্বিয়ার চোকো নামক এক স্থানে।
ফটোগ্রাফারঃ রবিন মুর
ছবির (!) মতো সুন্দর এই জায়গাটির অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার কারিজিনি জাতীয় উদ্যানে। ছবিটি লাখের উপরে লাইক পায় আর শেয়ার হয় বিভিন্ন জায়গায় তা প্রায় ২৯ হাজারের উপরে!
ফটোগ্রাফারঃ ইগনাসিও প্যালাসিওস
Comments
Post a Comment